SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

ভূগোল ও পরিবেশ - বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ - জলবায়ু (Climate )

বাংলাদেশের জলবায়ু সাধারণত সমভাবাপন্ন। দেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করায় এখানে ক্রান্তীয় জলবায়ু বিরাজ করে। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এ দেশের জলবায়ুর উপর এত বেশি যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু নামে পরিচিত। মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হলো বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব। এ বিভিন্ন ঋতুতে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য হয়। কিন্তু কোনো সময়ই শীতপ্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মতো চরমভাবাপন্ন হয় না। উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.০১° সেলসিয়াস এবং গড় বৃষ্টিপাত ২০৩ সেন্টিমিটার। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় (চিত্র ১০.৪)। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের জলবায়ুকে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত ও বার্ষিক তাপমাত্রার ভিত্তিতে তিনটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। যথা— (ক) গ্রীষ্মকাল, (খ) বর্ষাকাল ও (গ) শীতকাল ।

(ক) গ্রীষ্মকাল : বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস (ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ) পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল। এ সময় সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ ঋতুতে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিচে এ ঋতুর তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের বর্ণনা দেওয়া হলো ।

তাপমাত্রা : বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণ ঋতু হলো গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪° সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১° সেলসিয়াস। গড় হিসেবে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮° সেলসিয়াস পরিলক্ষিত হয়। এপ্রিল উষ্ণতম মাস, এ সময় সমুদ্র উপকূল থেকে দেশের অভ্যন্তরভাগে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে । বৃষ্টিপাত কালবৈশাখী ঝড় গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই ঝড় বজ্রবিদ্যুৎসহ : প্রবলবেগে মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ গ্রীষ্মকালে হয়। এ সময় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫১ সেন্টিমিটার (চিত্র ১০.৫)।

বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের উত্তরায়ণের জন্য বায়ুচাপের পরিবর্তন ঘটে। এ সময় বাংলাদেশে দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুপ্রবাহ অধিক উত্তাপের প্রভাবে উপরে উঠে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সংঘর্ষে বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হয় ।

(খ) বর্ষাকাল : বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাস (জ্যৈষ্ঠ-কার্তিক) পর্যন্ত বর্ষাকাল। অর্থাৎ গ্রীষ্ম ও শীতের মাঝামাঝি বৃষ্টিবহুল সময়কে বর্ষাকাল বা বর্ষা ঋতু বলে। জুন মাসের প্রথম দিকে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বর্ষাকাল শুরু হয়ে যায়। নিচে বর্ষা ঋতুর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো।

তাপমাত্রা : বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশে প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, ফলে এ সময় অধিক তাপমাত্রা অনুভূত হয় না। গড় তাপমাত্রা ২৭° সেলসিয়াস।

বৃষ্টিপাত : বর্ষাকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ থাকে। এ জলীয়বাষ্প শৈলোৎক্ষেপ প্ৰক্ৰিয়ায় বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। বছরের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ ভাগ এ সময়ে হয়।

বায়ুপ্রবাহ : জুন মাসে বাংলাদেশের উপর সূর্যের অবস্থানের কারণে বায়ুচাপের পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর থেকে আগত দক্ষিণ-পশ্চিম অয়ন বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করলে বর্ষাকাল আরম্ভ হয়। দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে পরিণত হয়। বর্ষা শেষে বাংলাদেশে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। জলীয়বাষ্পপূর্ণ এই বায়ু হিমালয় পর্বতে (বাংলাদেশের উত্তরে) বাঁধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। শুরু হয় বর্ষাকাল ।

(গ) শীতকাল : সাধারণত এ দেশে নভেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস (কার্তিক-ফাল্গুন) পর্যন্ত সময়কে শীতকাল বলে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের পর তাপমাত্রা কমতে থাকে। জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন থাকে (চিত্র ১০.৬)। তাপমাত্রা : আমাদের দেশে শীতকালে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯°সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১° সেলসিয়াস। জানুয়ারি শীতলতম মাস এবং এ মাসের গড় তাপমাত্রা ১৭.৭° সেলসিয়াস। শীতকালে দেশের উপকূল ভাগ থেকে উত্তর দিকে তাপমাত্রা কম থাকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯০৫ সালে দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ১° সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

বৃষ্টিপাত : শীতকালে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু এ সময় বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শীতকালে সাধারণত উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এ সময়ে ১০ সেন্টিমিটারের অধিক নয় ।
 

বায়ুপ্রবাহ : উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আগত শীতল মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে । এ সময় বাতাসের সর্বনিম্ন আর্দ্রতা শতকরা প্রায় ৩৬ ভাগ। দেশের উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে কখনো কখনো তীব্র শীতল বায়ু প্রবাহিত হওয়ার ফলে বেশ শীত অনুভূত হয়। উত্তরের হিমালয় পেরিয়ে আসা এই বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকে।

মৌসুমি বায়ু : মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। জুন মাসের প্রারম্ভে বঙ্গোপসাগর থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় বাধাপ্রাপ্ত হলে বৃষ্টিপাত হয়। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বত্র মৌসুমি বায়ু দ্বারা বৃষ্টিপাত ঘটে এবং তখনই এখানে বর্ষাকাল। বর্ষাকালীন সময়ে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রায়ই নিম্নচাপ (Depression) বা ঘূর্ণিবাতের (Cyclone) সংযোগ থাকে। বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের চার-পঞ্চমাংশ বর্ষাকালে হয়ে থাকে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য বর্ষাকালে তাপমাত্রা গ্রীষ্মকাল অপেক্ষা কম থাকে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল। এপ্রিল উষ্ণতম মাস। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রার বিশেষ কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। উষ্ণতা অপেক্ষা আর্দ্রতার উপর নির্ভর করেই এই দুই কালের প্রভেদ করা যায়। গ্রীষ্মকালে বায়ুর উষ্ণতা সাগর থেকে দেশের অভ্যন্তর দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কালবৈশাখী ঝড় গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই ঝড় বিদ্যুৎ এবং বজ্রসহ প্রবলবেগে মার্চ-এপ্রিল মাসে সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তীব্র গতি সম্পন্ন কালবৈশাখী ঝড় দেশের প্রচুর ক্ষতি করে। বাংলাদেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বৃষ্টিপাত কালবৈশাখীর দ্বারা সংঘটিত হয়। গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত ধান, পাট ও আখ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। অন্যদিকে শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহের আগমন ঘটায়। এই সময় গম ও রবিশস্য চাষ উপযোগী। প্রকৃতি প্রভাবিত কৃষিকাজই পরিবেশসম্মত ও কৃষকের জন্য লাভজনক।

কাজ : ঋতুভিত্তিক ও পরিবেশসম্মত ফসল চাষ উল্লেখ কর। 

 গ্রীষ্মকাল  বর্ষাকাল  শীতকাল
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

কাজ : কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত। 

 সতর্কতামূলক ব্যবস্থা  নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

 

Content added || updated By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.